আল্লাহ আমার রব

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ}

অর্থ: {হে মানবজাতি, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করো যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।} [বাকারা: ২১]

  • আল্লাহ তাআলা বলেন:

{هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ}

অর্থ: {তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।} [হাশর: ২২]

  • তিনি বলেন:

{لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ}

 [শূরা: ১১]অর্থ: {তাঁর মতো কোনো কিছুই নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।}

  • আল্লাহ আমার রব এবং সবকিছুর রব। তিনি সবকিছুর মালিক, সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা ও সবকিছুর নিয়ন্ত্রক।
  • একমাত্র তিনিই ইবাদতের উপযুক্ত, তিনি ছাড়া কোনো রব নেই এবং তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। 
  • তাঁর রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ এবং শ্রেষ্ঠতম গুণাবলী যা তিনি নিজের জন্য এবং তাঁর নবী (ﷺ) তাঁর জন্য সাব্যস্ত করেছেন। এসব নাম ও গুণাবলী পরিপূর্ণতা ও সৌন্দর্যের সর্বোচ্চ শিখরে। তাঁর মতো কোনো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

তাঁর সুন্দরতম কিছু নাম:

  • আর-রাযযাক
  • আর-রহমান
  • আল-ক্বাদীর
  • আল-মালিক
  • আস-সামী
  • আস-সালাম
  • আল-বাসীর
  • আল-ওয়াকীল
  • আল-খালিক
  • আল-লাতীফ
  • আল-কাফী
  • আল-গাফূর

একজন মুসলিম আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তার গভীরে ডুবে থাকে। এর একটি দৃষ্টান্ত হলো, সৃষ্টিজগতের নিজ সন্তানদের প্রতি যত্ন। সন্তানদের আহার করানো এবং তাদের প্রতি কী গভীর মনোযোগ, যতক্ষণ না তারা নিজেরা চলতে সক্ষম হয়! অতএব, পবিত্র সেই সত্তা যিনি তাদের স্রষ্টা এবং তাদের প্রতি স্নেহশীল। তাঁর স্নেহের নিদর্শন যে, তিনি তাদের জন্য এমন সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন যা তাদের সাহায্য করে এবং তাদের দুর্বলতা সত্ত্বেও তাদেরকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে সক্ষম করে।  

 

আল্লাহ আমার রব

যিনি বান্দাদের সার্বিক রিযিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। যে রিযিকের ওপর তাদের অন্তর ও দেহের সুস্থতা নির্ভর করে। 

সুবিশাল ও সুবিস্তৃত দয়ার অধিকারী, যার দয়া সবকিছুকে ঘিরে আছে।

পরিপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী, যাকে কোনো অক্ষমতা বা দুর্বলতা স্পর্শ করে না।

মহত্ত্ব, পরাক্রম ও পরিচালনার গুণে গুণান্বিত। সবকিছুর মালিক এবং নিয়ন্ত্রক।

যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু শোনেন।

সকল প্রকার দোষ, ত্রুটি ও বিচ্যুতি থেকে পবিত্র। 

যার দৃষ্টি ক্ষুদ্র-বৃহৎ সবকিছু পরিবেষ্টনকারী।  যিনি সর্ববিষয়ের ভেতর-বাহির সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবহিত ও অভিজ্ঞ।

যিনি তাঁর সৃষ্টির রিযিকের যামিন এবং তাদের কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত।যিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন, তাদের জন্য সবকিছু সহজ করে দেন এবং সকল বিষয়ে তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।

পূর্ববর্তী দৃষ্টান্ত ছাড়াই সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা ও অস্তিত্বদাতা।

যিনি তাঁর বান্দাদের সম্মান দান করেন, তাদের প্রতি দয়া করেন এবং তাদের চাওয়া পূর্ণ করেন।

যিনি তাঁর বান্দাদের সকল প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট। যার সাহায্য পেলে অন্য কারও সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। যাকে পেলে আর কাউকে লাগে না। 

যিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাদের পাপের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন এবং সেজন্য শাস্তি দেন না।

মুহাম্মদ (ﷺ) আমার নবী

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ}

অর্থ: {আমি আপনাকে জগতসমূহের জন্য কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।} [আম্বিয়া: ১০৭]

মুহাম্মদ (ﷺ) প্রেরিত রহমত:

তিনি মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (ﷺ) সর্বশেষ নবী ও রাসূল। আল্লাহ তাআলা তাঁকে দীন ইসলাম দিয়ে সমগ্র মানবজাতির নিকট প্রেরণ করেছেন, যেন তিনি তাদেরকে কল্যাণের পথ দেখাতে পারেন যার সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় হলো তাওহীদ এবং তাদেরকে অকল্যাণ থেকে বিরত রাখতে পারেন যার সর্বনিকৃষ্ট হলো শিরক। 

তাঁর নির্দেশ পালন করা, তাঁর সংবাদকে সত্যায়ন করা, তিনি যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে যেভাবে বলেছেন কেবল সেভাবেই আল্লাহর ইবাদত করা আবশ্যক।

তাঁর এবং তাঁর পূর্বের সকল নবীর রিসালাতের মূল কথা ছিল এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান যার কোনো শরীক নেই।

তাঁর (ﷺ) কিছু গুণাবলী:

  • সত্যবাদিতা
  • দয়া
  • সহনশীলতা
  • ধৈর্য
  • সাহসিকতা  
  • উদারতা
  • উত্তম চরিত্র
  • ন্যায়পরায়ণতা
  • বিনয়
  • ক্ষমা 

 

কুরআন কারীম আমার রবের কালাম

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُم بُرْهَانٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُّبِينً}

{হে মানবজাতি, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসে গেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি এক সুস্পষ্ট নূর নাযিল করেছি।}অর্থ: [নিসা: ১৭৪]

আল-কুরআনুল কারীম হলো আল্লাহ তাআলার কালাম যা তাঁর নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর ওপর নাযিল করেছেন, যাতে তিনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন আর তাদেরকে সরল-সঠিক পথের দিশা দেন।

যে ব্যক্তি তা তিলাওয়াত করে সে মহান সওয়াবের অধিকারী হয়। আর যে এর দিশা অনুযায়ী আমল করে, সে সরল পথে পরিচালিত হয়।

আরকানুল ইসলাম শিখি

নবী (ﷺ) বলেছেন: “(‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত: এই মর্মে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল; সালাত প্রতিষ্ঠা করা; যাকাত আদায় করা; রমযানের সাওম পালন এবং বাইতুল্লাহর হজ্জ করা’।”.

ইসলামের রোকনসমূহ হলো এমন ইবাদত যা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর অবশ্যপালনীয়। কোনো ব্যক্তির ইসলাম ততক্ষণ পর্যন্ত শুদ্ধ হবে না, যতক্ষণ না সে এগুলোর অপরিহার্যতা স্বীকার করবে এবং সবগুলো পালন করবে; কারণ ইসলাম এগুলোর ওপরই প্রতিষ্ঠিত। একারণেই এগুলোকে ইসলামের ‘রোকন’ বা স্তম্ভ বলা হয়।

এই রোকনগুলো হলো:

আরকানুল ইসলাম শিখি

প্রথম রোকন

এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল

আল্লাহ বলেন:

{فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ}

অর্থ: {সুতরাং জেনে রাখো, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।} [মুহাম্মদ: ১৯]

আল্লাহ বলেন:

{لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ}

অর্থ: {নিশ্চয় তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল এসেছেন। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর জন্য অসহনীয়। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।} [তাওবা: ১২৮]

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ হলো: আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য বা প্রকৃত ইলাহ নেই।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র অর্থ হলো: তাঁর নির্দেশ পালন করা, তাঁর প্রদত্ত সংবাদ সত্যায়ন করা, তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে যেভাবে বলেছেন কেবল সেভাবেই আল্লাহর ইবাদত করা।

 

দ্বিতীয় রোকন

সালাত কায়েম করা

আল্লাহ বলেন:

{وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ}

অর্থ: {আর তোমরা সালাত কায়েম করো।} [সূরা বাকারা: ১১০]

সালাত কায়েমের অর্থ হলো, আল্লাহ তাআলা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মদ (ﷺ) আমাদের যেভাবে শিখিয়েছেন সেভাবে সালাত আদায় করা।

 

তৃতীয় রোকন

যাকাত আদায় করা

আল্লাহ বলেন:

{وَآتُوا الزَّكَاةَ}

অর্থ: {আর তোমরা যাকাত আদায় করো।} [বাকারা: ১১০]

  • আল্লাহ তাআলা মুসলিমের ঈমানের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য, তাকে যে সম্পদের নিআমত দিয়েছেন তার শোকর আদায়ের জন্য এবং ফকীর ও মিসকীনদের সাহায্য করার জন্য যাকাত ফরজ করেছেন। যাকাত আদায় করার অর্থ হলো, যাকাতের উপযুক্ত বক্তিদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া।
  • নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ হলে সেটার যাকাত দেয়া ওয়াজিব। কুরআন কারীমে আল্লাহ যে আট শ্রেণীর মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন, তাদের এই যাকাত দেয়া হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, ফকীর ও মিসকীন।
  • যাকাত আদায়ের মাধ্যমে দয়া ও সহানুভূতির গুণে গুণান্বিত হওয়া যায়, মুসলিমের চরিত্র ও সম্পদ পবিত্র হয়, ফকীর ও মিসকীনদের অন্তর সন্তুষ্ট হয় এবং মুসলিম সমাজের সদস্যদের মাঝে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। একারণে একজন নেককার মুসলিম আনন্দের সাথে ও সন্তুষ্টচিত্তে যাকাত আদায় করে, কারণ এতে অন্য মানুষের মুখে হাসি ফোটে।
  • সঞ্চিত স্বর্ণ, রৌপ্য, নগদ অর্থ এবং লাভের উদ্দেশ্যে বেচাকেনার জন্য মজুদকৃত ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর যাকাতের পরিমাণ হলো ২.৫% বা শতকরা আড়াই ভাগ। যখন তা নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছাবে এবং এক বছর পূর্ণ হবে।
  • অনুরূপভাবে, চতুষ্পদ জন্তু (যথা উট, গরু, ছাগল) নির্দিষ্ট সংখ্যায় পৌঁছালে এবং বছরের অধিকাংশ সময় তা মালিকের খরচ ছাড়া জমিনের ঘাস খেয়ে জীবনধারণ করলে সেগুলোর ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
  • একইভাবে, ভূমি থেকে উৎপন্ন শস্য, ফল, খনিজ সম্পদ এবং গুপ্তধন নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছালে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে। 

 

 

 

চতুর্থ রোকন

রমযান মাসের সাওম পালন করা

আল্লাহ বলেন:

{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ}

 অর্থ: {হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।} [বাকারা: ১৮৩]

  • রমযান হলো হিজরী ক্যালেন্ডারের নবম মাস। এটি মুসলিমদের নিকট অত্যন্ত সম্মানিত মাস এবং বছরের অন্য মাসগুলোর চেয়ে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এই পুরো মাস সাওম পালন করা ইসলামের পাঁচটি রোকনের অন্যতম।
  • রমযানের সাওম হলো: আল্লাহ তাআলার ইবাদতের উদ্দেশ্যে পবিত্র রমযান মাসের প্রতিদিন সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী-সহবাস এবং সাওম ভঙ্গকারী অন্যান্য সকল কাজ থেকে বিরত থাকা।

 

 

পঞ্চম রোকন

পবিত্র বাইতুল্লাহর হজ্জ করা

আল্লাহ বলেন:

{وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا}

  অর্থ: {আর মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বাইতুল্লাহর হজ্জ করা আবশ্যক, যার সে পর্যন্ত পৌঁছানোর সামর্থ্য আছে।} [আলে ইমরান: ৯৭]  

  • সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর জীবনে একবার হজ্জ পালন করা ফরজ। আর হজ্জ হলো: নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ইবাদতসমূহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররমার বাইতুল হারাম এবং পবিত্র স্থানসমূহে গমন করা। নবী (ﷺ) হজ্জ করেছেন এবং তাঁর পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীরাও হজ্জ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ.) কে মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেমনটি আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে জানিয়েছেন:

{وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ}

অর্থ: {এবং তুমি মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে এবং সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে।} [হজ্জ: ২৭]

 

 

আরকানুল ঈমান শিখি

নবী (ﷺ) কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: (ঈমান হলো আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস স্থাপন করবে। আর তাকদীরের ভালো-মন্দে বিশ্বাস করবে।)

আরকানুল ঈমান হলো, অন্তরের এমন সব ইবাদত যা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর অবশ্যপালনীয়। কোনো ব্যক্তির ইসলাম ততক্ষণ পর্যন্ত শুদ্ধ হবে না, যতক্ষণ না সে এগুলোর প্রতি ঈমান আনবে। একারণেই এগুলোকে ঈমানের ‘রোকন’ বা স্তম্ভ বলা হয়। ইসলামের রোকন ও ঈমানের রোকনের মাঝে পার্থক্য হলো: ইসলামের রোকনসমূহ প্রকাশ্য আমল, যা মানুষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সম্পাদন করে, যেমন— শাহাদাতাইন পাঠ করা, সালাত ও যাকাত আদায় করা। আর ঈমানের রোকনসমূহ অন্তরের আমল, যা মানুষ অন্তর দ্বারা সম্পাদন করে, যেমন— আল্লাহ, তাঁর কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের ওপর ঈমান আনা।

ঈমানের অর্থ ও তাৎপর্য:

ঈমান হলো অন্তরে আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, শেষ দিবস এবং তাকদীরের ভালো-মন্দ দৃঢ়ভাবে সত্যায়ন করা এবং রাসূল (ﷺ) যা কিছু নিয়ে এসেছেন সবকিছু অনুসরণ করা: উদাহরণত মৌখিক স্বীকৃতি হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাসবীহ, তাহলীল এবং আল্লাহর প্রশংসা করা।

প্রকাশ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল হলো, যথা- সালাত, হজ্জ, সাওম ইত্যাদি।... অন্তরের বাতেনী বা নিগূঢ় আমল হলো: যেমন— আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, তাঁর ভয়, তাঁর ওপর ভরসা এবং তাঁর জন্য ইখলাস বা নিষ্ঠা।

বিশেষজ্ঞ আলিমগণ সংক্ষেপে ঈমানের সংজ্ঞা দেন এভাবে: অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা আমল করা, যা আনুগত্যের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং নাফরমানির মাধ্যমে হ্রাস পায়।

 

আরকানুল ঈমান শিখি

প্রথম রোকন

আল্লাহর ওপর ঈমান

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ}

 অর্থ: {প্রকৃত মুমিন তারাই যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে।} [নূর: ৬২] আল্লাহর ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো তাঁর রুবূবিয়্যাত (প্রতিপালকত্ব), উলূহিয়্যাত (উপাস্যত্ব) এবং আসমা ওয়া সিফাত (নামসমূহ ও গুণাবলী) তে তাঁকে এক ও অদ্বিতীয় মানা। তাতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত:


  •  তাঁর অস্তিত্বে ঈমান আনা।

  •  তাঁর রুবূবিয়্যাতে ঈমান আনা এবং বিশ্বাস করা যে, তিনিই সবকিছুর মালিক, স্রষ্টা, রিযিকদাতা এবং সকল বিষয়ের নিয়ন্ত্রক।

  •  তাঁর উলূহিয়্যাতে ঈমান আনা এবং বিশ্বাস করা যে, একমাত্র তিনিই ইবাদতের উপযুক্ত, তাঁর কোনো শরীক নেই। যথা- সালাত, দুআ, মানত, যবেহ, সাহায্য প্রার্থনা, আশ্রয় প্রার্থনা এবং অন্য সকল ইবাদত কেবল তাঁর জন্যই নিবেদন করা। 

  •  তাঁর সুন্দরতম নামসমূহ এবং শ্রেষ্ঠতম গুণাবলীতে ঈমান আনা। এভাবে যে, যা তিনি নিজের জন্য অথবা তাঁর নবী (ﷺ) তাঁর জন্য সাব্যস্ত করেছেন সেগুলো সাব্যস্ত করা। আর যা তিনি নিজের ব্যাপারে অথবা তাঁর নবী (ﷺ) তাঁর ব্যাপারে নাকচ করেছেন সেগুলো নাকচ করা। আর বিশ্বাস করা যে, তাঁর নাম ও গুণাবলী পরিপূর্ণতা ও সৌন্দর্যের সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত। তাঁর মতো কোনো কিছুই নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

দ্বিতীয় রোকন

ফিরিশতাদের ওপর ঈমান

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{الْحَمْدُ لِلَّهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَاعِلِ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا أُولِي أَجْنِحَةٍ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ يَزِيدُ فِي الْخَلْقِ مَا يَشَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ}

অর্থ: {সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা এবং ফিরিশতাদেরকে রাসূলরূপে নিযুক্তকারী, যারা দুই, তিন বা চার চার ডানা বিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টিতে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।}  [ফাতির: ১] 

  • আমরা ঈমান রাখি, ফিরিশতারা এক অদৃশ্য জগৎ। তারা আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ তাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে তাঁর অনুগত ও আজ্ঞাবহ বানিয়েছেন।
  • তারা বিশাল সৃষ্টি যাদের শক্তি ও সংখ্যা আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ জানে না। তাঁদের প্রত্যেকের রয়েছে নির্দিষ্ট গুণাবলী, নাম এবং দায়িত্ব যা আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন জিবরীল (আ.) যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূলগণের নিকট ওহী নিয়ে অবতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত।

 

তৃতীয় রোকন

কিতাবসমূহের ওপর ঈমান

আল্লাহ তাআলা বলেন:

قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

অর্থ: {তোমরা বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর ওপর এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাঁর বংশধরদের প্রতি নাযিল হয়েছিল এবং যা মূসা ও ঈসাকে দেয়া হয়েছিল এবং যা অন্যান্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল। আমরা তাদের মাঝে কোনো পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণকারী।} [বাকারা: ১৩৬]

  • এই মর্মে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, সকল আসমানী কিতাব আল্লাহর কালাম।
  • আর তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁর রাসূলগণের মাধ্যমে বান্দাদের নিকট সুস্পষ্ট সত্যসহ নাযিল হয়েছে।
  • আল্লাহ সুবহানাহু তাঁর নবী মুহাম্মদ (ﷺ) কে সমগ্র মানবজাতির নিকট প্রেরণ করে তাঁর শরীয়ত দ্বারা পূর্ববর্তী সকল শরীয়তকে রহিত করে দিয়েছেন এবং কুরআন কারীমকে অন্য সকল আসমানী কিতাবের ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী ও সেগুলোকে রহিতকারী বানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমকে যেকোনো পরিবর্তন বা বিকৃতি থেকে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি বলেন:

{إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ}

অর্থ: {নিশ্চয় আমিই এই যিকির (কুরআন) নাযিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণকারী।} [হিজর: ৯] এর কারণ হলো, কুরআন কারীম মানবজাতির জন্য আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ কিতাব, তাঁর নবী মুহাম্মদ (ﷺ) সর্বশেষ রাসূল এবং ইসলামই হলো সেই দীন যা আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য মনোনীত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

{إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ}

অর্থ: {নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন হলো ইসলাম।} [আলে ইমরান: ১৯]

আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাব তথা কুরআনে যেসব আসমানী কিতাবের নাম উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো:

  • 1 আল-কুরআনুল কারীম: আল্লাহ তাঁর নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর ওপর নাযিল করেছেন।
  • 2 তাওরাত: আল্লাহ তাঁর নবী মূসা (আ.) এর ওপর নাযিল করেছেন।
  • 3 ইনজীল: আল্লাহ তাঁর নবী ঈসা (আ.) এর ওপর নাযিল করেছেন।
  • 4 যাবূর: আল্লাহ তাঁর নবী দাঊদ (আ.) এর ওপর নাযিল করেছেন।
  • 5 ইবরাহীমের সহীফাসমূহ: আল্লাহ তাঁর নবী ইবরাহীম (আ.) এর ওপর নাযিল করেছেন।

চতুর্থ রোকন

রাসূলগণের ওপর ঈমান

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ}

অর্থ: {আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝে রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগূতকে বর্জন করো।} [নাহল: ৩৬]

  • এই মর্মে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক উম্মতের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদেরকে এক লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান করেছেন এবং তিনি ছাড়া অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার করতে বলেছেন। 
  • আর তারা সকলেই মানুষ, পুরুষ এবং আল্লাহর বান্দা ছিলেন। তারা ছিলেন সত্যবাদী ও সত্যায়িত, আল্লাহভীরু ও আমানতদার, হিদায়াতপ্রাপ্ত ও হিদায়াতকারী। আল্লাহ তাঁদের সত্যতার পক্ষে দলীলস্বরূপ তাদেরকে মুজিযা দ্বারা সাহায্য করেছেন। তারা আল্লাহর প্রেরিত সকল পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন এবং তারা সকলেই সুস্পষ্ট সত্য ও সরল পথের ওপর ছিলেন।
  • শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের সকলের দাওয়াতের মূলকথা ছিল এক ও অভিন্ন। আর তা হলো, এক আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা’র ইবাদত করা এবং তাঁর সাথে শরীক না করা। 

 

পঞ্চম রোকন

শেষ দিবসে ঈমান

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا}

অর্থ: {আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে কিয়ামতের দিনে একত্র করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে হতে পারে?} [নিসা: ৮৭]

  • আখিরাত তথা শেষ দিবস সম্পর্কিত সকল বিষয়- যা আমাদের রব আযযা ওয়া জাল্লা তাঁর কিতাবে জানিয়েছেন অথবা আমাদের নবী মুহাম্মদ (ﷺ) আমাদেরকে বলেছেন- সবকিছুতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। যথা- মানুষের মৃত্যু, পুনরুত্থান, হাশর, শাফাআত, মীযান, হিসাব, জান্নাত ও জাহান্নাম এবং শেষ দিবস সম্পর্কিত অন্যান্য সকল বিষয়।

 

ষষ্ঠ রোকন

তাকদীরের ভালো-মন্দের ওপর ঈমান

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ}

অর্থ: {নিশ্চয় আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।} [ক্বামার: ৪৯]

  • এমর্মে বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এই পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের ওপর যা কিছু ঘটে, তা সবই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জ্ঞান, তাঁর নির্ধারণ এবং তাঁর একক ব্যবস্থাপনার অধীনে হয়, এতে তাঁর কোনো শরীক নেই। আর এই তাকদীর মানব সৃষ্টির পূর্বেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মানুষের নিজস্ব ইচ্ছা ও স্বাধীনতা রয়েছে এবং সে-ই তার কর্মের প্রকৃত কর্তা; কিন্তু তা আল্লাহর জ্ঞান, ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের বাইরে নয়। 

তাকদীরের ওপর ঈমান চারটি স্তরে বিভক্ত। সেগুলো হলো:

 

  • প্রথমআল্লাহর সার্বিক ও সম্যক জ্ঞানের ওপর ঈমান আনা।
  • দ্বিতীয় কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সবকিছু আল্লাহ কর্তৃক লিপিবদ্ধ হওয়ার ওপর ঈমান আনা।
  • তৃতীয়আল্লাহর চূড়ান্ত ইচ্ছা ও পরিপূর্ণ ক্ষমতার ওপর ঈমান আনা। সুতরাং তিনি যা চান তা-ই হয় আর যা চান না তা হয় না।
  • চতুর্থআল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা এবং সৃষ্টিতে তাঁর কোনো শরীক নেই- এর ওপর ঈমান আনা।

উজু শিখি

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ}

অর্থ: {নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্রতা অর্জন করে তাদেরকেও ভালোবাসেন।} [বাকারা: ২২২]

নবী (ﷺ) বলেছেন: (আমার এই উজুর মতো উজু করো)

সালাতের মহান মর্যাদার কারণেই আল্লাহ এর পূর্বে পবিত্রতা অর্জনের বিধান দিয়েছেন এবং একে সালাতের শুদ্ধতার জন্য শর্ত বানিয়েছেন। পবিত্রতা হলো সালাতের চাবি। এর ফযীলত উপলব্ধি করলে অন্তর সালাত আদায়ের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। নবী (ﷺ) বলেছেন: (পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক... এবং সালাত হলো নূর)।

তিনি (ﷺ) আরও বলেছেন: (যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উজু করে, তার শরীর থেকে গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়)।

এভাবে বান্দা উজুর মাধ্যমে দৈহিক পবিত্রতা ও ইবাদতের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক পবিত্রতাসহ তার রবের অভিমুখী হয়। আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে, নবী (ﷺ) এর আদর্শের অনুসারী হয়ে। 

যেসব কাজের জন্য অজু ওয়াজিব:

  •  ফরজ বা নফল সকল প্রকারের সালাতের জন্য।
  •  কাবা তাওয়াফের জন্য।
  •  কুরআন স্পর্শ করার জন্য।
  • আমি পবিত্র পানি দিয়ে উজু ও গোসল করি: 
  • পবিত্র পানি হলো: যে পানি আকাশ থেকে বর্ষিত হয় অথবা যমীন থেকে উৎসারিত হয় এবং স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, পানির তিনটি গুণের (রঙ, স্বাদ ও গন্ধ) কোনোটি এমন কোনো বস্তুর মিশ্রণে পরিবর্তিত হয় না যা তার পবিত্রতা হরণ করে।

উজু শিখি

নিয়ত করা। নিয়তের স্থান হলো অন্তর।

নিয়তের অর্থ হলো, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত সম্পাদনের প্রতি অন্তরের দৃঢ় সংকল্প।

দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।

المضمضة বা কুলি করা।
(المضمضة) হলো: মুখে পানি প্রবেশ করিয়ে নাড়াচাড়া করে বাইরে ফেলে দেয়া।

الاستنشاق  তথা নাকে পানি দেয়া।

(الاستنشاق) হলো: শ্বাস দ্বারা নাকের একেবারে ভেতর পর্যন্ত পানি টেনে নেয়া। 

আর (الاستنثار) হলো: শ্বাস দ্বারা নাকের ভেতরের শ্লেষ্মা ও অন্যান্য ময়লা বের করে দেয়া।

মুখমণ্ডল ধৌত করা।

মুখমণ্ডল: মুখমণ্ডল হলো যা দিয়ে মুখোমুখি হওয়া যায়।

প্রস্থ সীমা: এক কান থেকে অন্য কান পর্যন্ত। 

দৈর্ঘ্য সীমা: স্বাভাবিকভাবে মাথার চুল গজানোর স্থান থেকে চিবুকের নিচ পর্যন্ত।

মুখমণ্ডল ধোয়ার মাঝে সকল প্রকার হালকা চুল অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে (البياض) ও (العذار) অন্তর্ভুক্ত।
(البياض) হলো: কানের লতি ও ‘ইযার’ এর মধ্যবর্তী অংশ।

(العذار) হলো: (মুখমণ্ডলের) উঁচু হাড়ের ওপর উদ্গত চুল, যা মাথা থেকে নেমে কানের ছিদ্রের সমান্তরাল হয়ে ‘ওয়াতাদ’ তথা ছিদ্রের সামনের উঁচু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। 

একইভাবে দাড়ি ঘন হলে তার উপরিভাগ এবং ঝুলন্ত অংশ ধৌত করাও এর অন্তর্ভুক্ত।

 

দুই হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।

উভয় কনুই হাত ধোয়ার ফরজের অন্তর্ভুক্ত।

দুই কানসহ সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসাহ করা।

মাথার সম্মুখভাগ থেকে শুরু করে উভয় হাত মাথার পেছন পর্যন্ত নিয়ে যাবে, অতঃপর আবার পেছন থেকে সম্মুখভাগে ফিরিয়ে আনবে। 

শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা কানের ভেতরের অংশ এবং বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা কানের বাইরের অংশ মাসাহ করবে। এভাবে কানের ভেতর ও বাহির উভয় অংশ মাসাহ করবে।

দুই পায়ের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা। টাখনুদ্বয়ও পা ধোয়ার ফরজের অন্তর্ভুক্ত। 

(الكعبان) তথা টাখনুদ্বয় হলো: পায়ের নলার নিম্নাংশে অবস্থিত উঁচু হাড়দ্বয়।

উজু ভঙ্গের কারণসমূহ: 

  • 1 সম্মুখ বা পশ্চাৎ পথ দিয়ে কোনো কিছু নির্গত হওয়া। যথা: মল, মূত্র, বায়ু, বীর্য ও মযী।
  • 2 গভীর ঘুম, অবচেতন, মাতলামি বা পাগলামির কারণে জ্ঞান লোপ পাওয়া।
  • 3 যেসব বিষয় গোসল আবশ্যক করে। যথা, জানাবাত (তথা বীর্যপাত বা সহবাসজনিত অপবিত্র অবস্থা), হায়েয ও নিফাস।

প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূর্ণ করার পরে নাপাকি দূর করা ওয়াজিব। এটি পবিত্র পানি দ্বারা করা সর্বোত্তম। তবে পানি ছাড়া নাপাকি দূরকারী অন্যান্য বস্তু দ্বারাও করার সুযোগ রয়েছে। যেমন— পাথর, কাগজ, কাপড় ইত্যাদি। শর্ত হলো, তিন কিংবা ততোধিক বার মুছে পরিষ্কার করতে হবে এবং সেই বস্তুটি পবিত্র ও বৈধ হতে হবে।

মোজার ওপর মাসাহ

চামড়ার মোজা কিংবা সাধারণ (কাপড়ের) মোজা পরিহিত অবস্থায় পা ধোয়ার পরিবর্তে সেগুলোর ওপর মাসাহ করা যায়। তবে সে জন্য কিছু শর্ত রয়েছে:

  • 1 ছোট অপবিত্রতা বা বড়ো অপবিত্রতা থেকে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের পরে তা পরিধান করতে হবে। সর্বাবস্থায় পা ধোয়ার পরে পরতে হবে।  
  • 2 মোজাদ্বয় পবিত্র হতে হবে। নাপাক হতে পারবে না।
  • 3 মাসাহের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসাহ করতে হবে।
  • 4 মোজাদ্বয় হালাল হতে হবে। ফলে চুরি বা ছিনতাই করা মোজার ওপর মাসাহ হবে না।
  • (الخفان): খুফফ হলো চামড়া বা এ জাতীয় পাতলা বস্তু দিয়ে তৈরি পায়ের মোজা। পা আবৃতকারী জুতাও এর অন্তর্ভুক্ত। 
  • (الجوربان): জাওরাব হলো কাপড় ইত্যাদির তৈরি পায়ের মোজা যা ‘শাররাব’ নামেও পরিচিত।

মোজার ওপর মাসাহ

মোজার ওপর মাসাহ বৈধ হওয়ার হিকমত:

মাসাহের বৈধতার রহস্য হলো মুসলিমদের জন্য সহজীকরণ ও কষ্ট লাঘব করা। যাদের জন্য মোজা খুলে পা ধোয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় বিশেষত শীতকালে, তীব্র ঠাণ্ডার সময়ে এবং সফরে।

মাসাহের সময়সীমা:

মুকীম (বাড়িতে অবস্থানকারী): এক দিন এক রাত (২৪ ঘণ্টা)।

মুসাফির (সফরকারী): তিন দিন তিন রাত (৭২ ঘণ্টা)।

অজু ভঙ্গের পর প্রথমবার মোজার ওপর মাসাহ করার সময় থেকে মাসাহের সময়সীমা গণনা শুরু হবে।

চামড়া বা কাপড়ের মোজার ওপর মাসাহ করার পদ্ধতি:

  •  দুই হাত (পানি দ্বারা) ভেজাবে।
  •  আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে নলার শুরু পর্যন্ত পায়ের উপরিভাগে হাত বুলাবে।
  •  ডান পা ডান হাত দিয়ে এবং বাম পা বাম হাত দিয়ে মাসাহ করবে।

মাসাহ ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ: 

  •  গোসল আবশ্যককারী বিষয়সমূহ।
  •  মাসাহের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়া।

গোসল

যদি পুরুষ বা নারীর মধ্যে সহবাস সংঘটিত হয়, অথবা জাগ্রত বা ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনাসহ বীর্যপাত হয়, তবে তাদের ওপর গোসল ওয়াজিব হয়, যেন তারা সালাত বা পবিত্রতা আবশ্যক এমন ইবাদতসমূহ আদায় করতে পারে। অনুরূপভাবে নারী যখন হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হয়, তখন তার ওপর সালাত বা পবিত্রতা আবশ্যক এমন ইবাদত আদায়ের পূর্বে গোসল করা ওয়াজিব।

গোসল

গোসলের পদ্ধতি নিম্নরূপ:
মুসলিম ব্যক্তি যেভাবেই হোক তার পুরো শরীর পানি দিয়ে ধৌত করবে, এর মধ্যে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়াও অন্তর্ভুক্ত। যখন সে তার শরীরকে সম্পূর্ণরূপে পানি দ্বারা ধৌত করবে, তখন তার বড় নাপাকি দূর হয়ে যাবে এবং পবিত্রতা অর্জিত হবে।

নাপাক অবস্থায় গোসলের আগে নিম্নলিখিত কাজগুলো নিষিদ্ধ:

  •  সালাত আদায় করা।
  •  কা’বা তাওয়াফ করা।
  •  মসজিদে অবস্থান করা। তবে অবস্থান না করে শুধু অতিক্রম করা জায়েয।
  •  কুরআন স্পর্শ করা। 
  •  কুরআন তিলাওয়াত করা।

তায়াম্মুম

যদি কোনো মুসলিম পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি না পায়, অথবা অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে পানি ব্যবহার করতে অক্ষম হয় এবং সালাতের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার আশঙ্কা করে, তবে সে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে।

তায়াম্মুম

তায়াম্মুমের পদ্ধতি হলো, দুই হাত একবার মাটিতে আঘাত করবে, অতঃপর তা দিয়ে কেবল মুখমণ্ডল ও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। শর্ত হলো, মাটি পবিত্র হতে হবে।

যেসব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়:

  •  যা কিছু উজু ভঙ্গ করে তা তায়াম্মুমও ভঙ্গ করে।
  •  যে ইবাদতের জন্য তায়াম্মুম করা হয়েছে, তা শুরু করার পূর্বে পানি পাওয়া গেলে।

সালাত শিখি

আল্লাহ তাআলা একজন মুসলিমের ওপর দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন, সেগুলো হলো: ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশা।

সালাতের জন্য প্রস্তুত হই

  • যখন সালাতের ওয়াক্ত হয়, তখন মুসলিম ব্যক্তি ছোট ও বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে, যদি সে বড় অপবিত্র অবস্থায় থাকে।

(الحدث الأكبر) বা বড় অপবিত্রতা: যা মুসলিমের ওপর গোসল ওয়াজিব করে।

(الحدث الأصغر) বা ছোট অপবিত্রতা: যা মুসলিমের ওপর উজু ওয়াজিব করে।

  • মুসলিম ব্যক্তি অপবিত্রতা থেকে পবিত্র স্থানে পবিত্র পোশাকে সতর ঢেকে সালাত আদায় করবে।
  • সালাতের সময় মুসলিম ব্যক্তি উপযুক্ত পোশাকে নিজেকে সজ্জিত করবে এবং শরীর আবৃত করবে। পুরুষের জন্য সালাতে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত কোনো অংশ প্রকাশ করা জায়েয নয়।
  • মহিলার জন্য সালাতে মুখমণ্ডল ও দুই হাতের কব্জি ব্যতীত সমস্ত শরীর ঢাকা ওয়াজিব।
  • মুসলিম ব্যক্তি সালাতের মধ্যে নির্দিষ্ট দুআ-কালাম ছাড়া অন্য কোনো কথা বলবে না, ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। সালাতে এদিক-ওদিক তাকাবে না। যদি কেউ সালাতের নির্দিষ্ট দুআ-কালাম মুখস্থ করতে অক্ষম হয়, তবে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকির ও তাসবীহ পাঠ করবে। তবে তার ওপর দ্রুত সালাত ও এর মাঝে পঠিত দুআ-কালাম শিখে নেয়া আবশ্যক।

সালাত শিখি

আমি যে ফরয সালাত আদায় করতে চাই তার জন্য নিয়ত করবো। নিয়তের স্থান হলো অন্তর।

অজু করার পর আমি কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াব এবং সক্ষম হলে দাঁড়িয়েই সালাত আদায় কর

কাঁধ বরাবর হাত উঠিয়ে বলব: (আল্লাহু আকবার) এবং এর মাধ্যমে সালাতে প্রবেশের নিয়ত করব।

হাদীসে বর্ণিত ইস্তিফতাহের দুআ (সানা) পড়ব। যেমন:

(سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرَكَ)

(সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুক)।

বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে বলব: (আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম)

প্রত্যেক রাকাআতে সূরা ফাতিহা পড়ব। তা হলো:

{بسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (1) الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2) الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (3) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5) اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ(7)}

(১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ২. আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন ৩. আর-রাহমানির রাহীম ৪. মালিকি ইয়াওমিদ-দীন ৫. ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা‘ঈন ৬. ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকীম ৭. সিরাতাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম, গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বোয়াল্লীন।)

সূরা ফাতিহার পর প্রত্যেক সালাতের শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাআতে কুরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করব। এটি ওয়াজিব নয়, তবে বিশাল সওয়াবের কাজ। 

আমি (আল্লাহু আকবার) বলে রুকূতে যাব, এমনভাবে রুকূ করবো যেন আমার পিঠ সোজা থাকে এবং আঙ্গুলগুলো ছড়ানো অবস্থায় দুই হাত হাঁটুর ওপর থাকে। অতঃপর রুকূতে বলব: (সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম)

কাঁধ বরাবর হাত উঠিয়ে (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ) বলতে বলতে রুকূ থেকে উঠব। যখন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাব, তখন বলব: (রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ)

আমি (আল্লাহু আকবার) বলে সিজদায় যাবো এবং উভয় হাত, হাঁটু, পা, কপাল ও নাকের ওপর সিজদা করবো। সিজদায় বলব: (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা)

(আল্লাহু আকবার) বলে সিজদা থেকে উঠব এবং বাম পা বিছিয়ে ও ডান পা খাড়া রেখে পিঠ সোজা করে বসব। এরপর বলব: (রাব্বিগফির লী)।

(আল্লাহু আকবার) বলে প্রথম সিজদার মতোই আরেকটি সিজদা করব।

সিজদা থেকে (আল্লাহু আকবার) বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব এবং প্রথম রাকাআতের মতোই সালাতের বাকি রাকাআতগুলো পূর্ণ করবো। 

যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সালাতের দ্বিতীয় রাকাআতের পর প্রথম তাশাহহুদ পড়ার জন্য বসব। তাশাহহুদ হলো:  

(التحيات لله والصلوات والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله)

(আত-তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত-ত্বইয়্যিবাত, আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ)। অতঃপর তৃতীয় রাকাআতের জন্য উঠে দাঁড়াব।

প্রত্যেক সালাতের শেষ রাকাআতের পর শেষ তাশাহহুদ পড়ার জন্য বসব, তা হলো:

(التحيات لله والصلوات والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله، اللهم صلِّ على محمد وعلى آل محمد، كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم، إنك حميد مجيد. اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد، كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم، إنك حميد مجيد)

(আত-তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত-ত্বইয়্যিবাত, আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ)।

এরপর ডান দিকে (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ) বলে সালাম ফেরাব এবং বাম দিকেও (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ) বলে সালাম ফেরাব। এর মাধ্যমে সালাত থেকে বের হওয়ার নিয়ত করব। এভাবে আমার সালাত সম্পন্ন হবে।

মুসলিম নারীর পর্দা

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا}

অর্থ: {হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, আপনার কন্যাদেরকে এবং মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।} [আহযাব: ৫৯].

আল্লাহ তাআলা মুসলিম নারীর ওপর পর্দা, সতর ঢাকা এবং গায়রে মাহরাম পুরুষদের থেকে তার গোটা শরীরকে নিজ দেশে প্রচলিত পোশাক দ্বারা আবৃত করা ওয়াজিব করেছেন। ফলে কেবল স্বামী অথবা মাহরাম ছাড়া অন্য কারও সামনে পর্দা খোলা বৈধ নয়। মাহরাম হলো: সেসকল পুরুষ যাদের সাথে মুসলিম নারীর বিবাহ চিরস্থায়ীরূপে হারাম। যথা: (পিতা এবং ঊর্ধ্বতন পুরুষ; পুত্র এবং অধস্তন পুরুষ; চাচা ও মামা; ভাই, ভাইয়ের ছেলে ও বোনের ছেলে; মায়ের স্বামী; স্বামীর পিতা এবং ঊর্ধ্বতন পুরুষ; স্বামীর পুত্র এবং অধস্তন পুরুষ; দুধ-ভাই, ও দুধ-মায়ের স্বামী। বংশের কারণে যারা হারাম হয়, দুধ-সম্পর্কের কারণেও তারা হারাম হয়)।

মুসলিম নারী তার পোশাকের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখবে:

 

  • প্রথমতপোশাক যেন সমস্ত শরীর আবৃত করে।
  • দ্বিতীয়তপোশাক যেন সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য না হয়।
  • তৃতীয়ত
    এতো স্বচ্ছ না হয় যাতে দেহ প্রকাশ পায়।
  • চতুর্থত
     পোশাক যেন প্রশস্ত হয়, এমন আঁটসাঁট না হয় যাতে দেহের
  •                         কোনো অংশ ফুটে ওঠে।
  • পঞ্চমত
    সুগন্ধিযুক্ত না হয়।
  • ষষ্ঠত
    নারীর পোশাক যেন পুরুষের পোশাকের মতো না হয়।
  • সপ্তমতঅমুসলিম নারীদের ধর্মীয় উপাসনা বা উৎসবের বিশেষ
  •                        পোশাক সদৃশ না হয়।

 

মুমিনের গুণাবলী

আল্লাহ তাআলা বলেন:

{إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ}

অর্থ: {প্রকৃত মুমিন তারাই যাদের সামনে আল্লাহর নাম নেয়া হলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে এবং যখন তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে।} [আনফাল: ২].

মুমিনের গুণাবলী:

  • সে কথায় সত্যবাদী হয়, মিথ্যা বলে না।
  • সে ওয়াদা ও অঙ্গীকার পূরণ করে।
  • বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে না।
  • আমানত আদায় করে।
  • নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার মুসলিম ভাইয়ের জন্যও তা-ই পছন্দ করে।
  • সে উদার ও দানশীল।
  • মানুষের প্রতি ইহসান করে।
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।
  • আল্লাহর তাকদীরে সন্তুষ্ট থাকে। সুখের সময় শোকর আদায় করে এবং দুঃখের সময় সবর করে।
  • সে লজ্জাশীলতার গুণে গুণান্বিত।
  • সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন করে।
  • তার অন্তর হয় বিদ্বেষমুক্ত এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্যের ওপর সীমালঙ্ঘন থেকে পবিত্র থাকে।
  • সে মানুষকে ক্ষমা করে।
  • সে সুদ খায় না এবং সুদী লেনদেন করে না।
  • যিনা করে না।
  • মদ পান করে না।
  • প্রতিবেশীর প্রতি ইহসান করে।
  • যুলুম ও বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
  • চুরি ও প্রতারণা করে না।
  • সে পিতা-মাতার অনুগত হয়। তারা অমুসলিম হলেও। এবং সৎ কাজে তাদের আনুগত্য করে।
  • সন্তানদেরকে উত্তম চরিত্রে প্রতিপালন করে, তাদেরকে শরঈ ওয়াজিব কাজগুলোর আদেশ দেয় এবং অশ্লীল ও হারাম কাজ থেকে নিষেধ করে।
  • অমুসলিমদের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য বা তাদের প্রতীক হয়ে ওঠা রীতি-নীতির অনুকরণ করে না।
 

আমার সুখ আমার দীন ইসলামে

আল্লাহ তাআলা বলেন: 

{مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ}

অর্থ: {যে পুরুষ বা নারী মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত, কর্মের তুলনায় আমি অবশ্যই তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।} [নাহল: ৯৭].

একজন মুসলিমের অন্তরে আনন্দ, প্রশান্তি ও সুখ লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো জীবিত বা মৃত কোনো ব্যক্তি কিংবা মূর্তির মধ্যস্থতা ছাড়া সরাসরি তার রবের সাথে সম্পর্ক। আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তাঁর বান্দাদের নিকটবর্তী, তাদের ডাক শোনেন এবং তাদের দুআ কবুল করেন। যেমন তিনি বলেছেন:

{وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ}

অর্থ: {আর আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (বলে দিন) আমি তো নিকটেই। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে, যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়।} [বাকারা: ১৮৬].

তিনি আমাদেরকে তাঁর কাছে দুআ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই দুআকে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত গণ্য করেছেন, যার মাধ্যমে মুসলিম তার রবের নৈকট্য লাভ করে। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা বলেন:

{وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ}

অর্থ: {তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।} [গাফির: ৬০].

সুতরাং একজন নেককার মুসলিম সর্বদা তার রবের মুখাপেক্ষী, সর্বদা তাঁর দরবারে দুআয় রত এবং সৎ কর্মের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই পৃথিবীতে এক মহান হিকমতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আর তা হলো তাঁর এক ও অদ্বিতীয় সত্তার ইবাদত করা। তিনি আমাদের জন্য এক পূর্ণাঙ্গ ও রাব্বানী দীন মনোনীত করেছেন যা আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের সকল বিষয়কে সুশৃঙ্খল করে। এই ন্যায়নিষ্ঠ শরীয়তের মাধ্যমে তিনি জীবনের অপরিহার্য পাঁচটি মৌলিক বিষয়—আমাদের দীন, আমাদের জীবন, আমাদের সম্ভ্রম, আমাদের বোধবুদ্ধি এবং আমাদের সম্পদ—সংরক্ষণ করেছেন। যে ব্যক্তি শরঈ নির্দেশনাগুলো মান্য করে এবং হারাম থেকে বিরত থেকে জীবনযাপন করে, তার এই মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং নিঃসন্দেহে তার জীবন সুখ ও প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

একজন মুসলিমের সাথে তার রবের সম্পর্ক পরম গভীর, যা অন্তরাত্মাকে প্রশান্তি দেয়, মানসিক স্বস্তি এবং নিরাপত্তা ও আনন্দের অনুভূতি ছড়ায়। এটি মুমিন বান্দার হৃদয়ে মহান রবের পাশে থাকা, তাঁর তত্ত্বাবধান ও অভিভাবকত্বের অনুভূতি জাগ্রত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

{اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ}

অর্থ: {আল্লাহ ঈমানদারদের বন্ধু ও অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন।} [বাকারা: ২৫৭].

এই সুমহান সম্পর্ক এমন এক আধ্যাত্মিক অবস্থা যা পরম করুণাময়ের ইবাদতে তৃপ্তি দেয়। তাঁর সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব বানায়। এবং ঈমানের মিষ্টতায় ভরপুর করে অন্তরকে সুখের আকাশে ওড়ায়।

এই মিষ্টতার স্বাদ কেবল সে ব্যক্তিই বর্ণনা করতে পারে, যে আনুগত্য ও পাপ বর্জনের মাধ্যমে নিজে তা আস্বাদন করেছে। একারণেই নবী মুহাম্মদ (ﷺ) বলেছেন: (সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে আল্লাহকে, দীন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসেবে মুহাম্মদকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছে)

হ্যাঁ, যখন মানুষ তার স্রষ্টার সামনে নিজের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি উপলব্ধি করে, তাঁকে তাঁর সুন্দর নাম ও গুণাবলী দ্বারা চেনে, এমনভাবে তাঁর ইবাদত করে যেন সে তাঁকে দেখছে এবং কেবল আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর সন্তুষ্টির জন্যই নিষ্ঠার সাথে তাঁর ইবাদত করে, তখন সে দুনিয়াতে পবিত্র ও সুখময় জীবনযাপন করে এবং আখিরাতে উত্তম প্রতিদান লাভ করে।

এমনকি দুনিয়াতেও মুমিনের ওপর যে বিপদাপদ আসে, তার যন্ত্রণাও ইয়াকীনের শীতলতায় এবং আল্লাহর তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টির মাধ্যমে দূর হয়ে যায়। তাকদীরে নির্ধারিত ভালো-মন্দ সবকিছুর প্রতি পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট থাকা এবং তার প্রশংসা করার মাধ্যমে সেই যন্ত্রণা লাঘব হয়।

একজন মুসলিমের সুখ ও প্রশান্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে করণীয় হলো, বেশি বেশি আল্লাহর যিকির এবং কুরআন কারীম তিলাওয়াত করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:

{الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ}

অর্থ: {যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর যিকিরে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখো, আল্লাহর যিকিরেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।} [রাদ: ২৮]. ফলে একজন মুসলিম যত বেশি আল্লাহর যিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করবে, তত বেশি আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে, তার আত্মা পবিত্র ও তার ঈমান শক্তিশালী হবে।

অনুরূপভাবে প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো, বিশুদ্ধ উৎস থেকে দীনের বিষয়গুলো শেখার প্রতি যত্নবান হওয়া, যাতে সে সুস্পষ্ট জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে আল্লাহর ইবাদত করতে সক্ষম হয়। নবী (ﷺ) বলেছেন: (ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরয)

একইভাবে কর্তব্য হলো, হিকমত বুঝে আসুক বা না আসুক আল্লাহ তাআলার সকল আদেশের সামনে সমর্পিত ও অনুগত হওয়া যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কিতাবে বলেন:

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا

অর্থ: {আর কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর জন্য উচিত নয় যে, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন, তখন তাদের সে বিষয়ে কোনো এখতিয়ার থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করবে, সে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত হলো।} [আহযাব: ৩৬].

আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সকল সাহাবীর ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।