আল্লাহ তাআলা বলেন:
{مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ}
অর্থ: {যে পুরুষ বা নারী মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত, কর্মের তুলনায় আমি অবশ্যই তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।} [নাহল: ৯৭].
একজন মুসলিমের অন্তরে আনন্দ, প্রশান্তি ও সুখ লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো জীবিত বা মৃত কোনো ব্যক্তি কিংবা মূর্তির মধ্যস্থতা ছাড়া সরাসরি তার রবের সাথে সম্পর্ক। আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তাঁর বান্দাদের নিকটবর্তী, তাদের ডাক শোনেন এবং তাদের দুআ কবুল করেন। যেমন তিনি বলেছেন:
{وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ}
অর্থ: {আর আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (বলে দিন) আমি তো নিকটেই। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে, যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়।} [বাকারা: ১৮৬].
তিনি আমাদেরকে তাঁর কাছে দুআ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই দুআকে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত গণ্য করেছেন, যার মাধ্যমে মুসলিম তার রবের নৈকট্য লাভ করে। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা বলেন:
{وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ}
অর্থ: {তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।} [গাফির: ৬০].
সুতরাং একজন নেককার মুসলিম সর্বদা তার রবের মুখাপেক্ষী, সর্বদা তাঁর দরবারে দুআয় রত এবং সৎ কর্মের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই পৃথিবীতে এক মহান হিকমতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আর তা হলো তাঁর এক ও অদ্বিতীয় সত্তার ইবাদত করা। তিনি আমাদের জন্য এক পূর্ণাঙ্গ ও রাব্বানী দীন মনোনীত করেছেন যা আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের সকল বিষয়কে সুশৃঙ্খল করে। এই ন্যায়নিষ্ঠ শরীয়তের মাধ্যমে তিনি জীবনের অপরিহার্য পাঁচটি মৌলিক বিষয়—আমাদের দীন, আমাদের জীবন, আমাদের সম্ভ্রম, আমাদের বোধবুদ্ধি এবং আমাদের সম্পদ—সংরক্ষণ করেছেন। যে ব্যক্তি শরঈ নির্দেশনাগুলো মান্য করে এবং হারাম থেকে বিরত থেকে জীবনযাপন করে, তার এই মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং নিঃসন্দেহে তার জীবন সুখ ও প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
একজন মুসলিমের সাথে তার রবের সম্পর্ক পরম গভীর, যা অন্তরাত্মাকে প্রশান্তি দেয়, মানসিক স্বস্তি এবং নিরাপত্তা ও আনন্দের অনুভূতি ছড়ায়। এটি মুমিন বান্দার হৃদয়ে মহান রবের পাশে থাকা, তাঁর তত্ত্বাবধান ও অভিভাবকত্বের অনুভূতি জাগ্রত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
{اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ}
অর্থ: {আল্লাহ ঈমানদারদের বন্ধু ও অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন।} [বাকারা: ২৫৭].
এই সুমহান সম্পর্ক এমন এক আধ্যাত্মিক অবস্থা যা পরম করুণাময়ের ইবাদতে তৃপ্তি দেয়। তাঁর সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব বানায়। এবং ঈমানের মিষ্টতায় ভরপুর করে অন্তরকে সুখের আকাশে ওড়ায়।
এই মিষ্টতার স্বাদ কেবল সে ব্যক্তিই বর্ণনা করতে পারে, যে আনুগত্য ও পাপ বর্জনের মাধ্যমে নিজে তা আস্বাদন করেছে। একারণেই নবী মুহাম্মদ (ﷺ) বলেছেন: (সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে আল্লাহকে, দীন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসেবে মুহাম্মদকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছে)।
হ্যাঁ, যখন মানুষ তার স্রষ্টার সামনে নিজের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি উপলব্ধি করে, তাঁকে তাঁর সুন্দর নাম ও গুণাবলী দ্বারা চেনে, এমনভাবে তাঁর ইবাদত করে যেন সে তাঁকে দেখছে এবং কেবল আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর সন্তুষ্টির জন্যই নিষ্ঠার সাথে তাঁর ইবাদত করে, তখন সে দুনিয়াতে পবিত্র ও সুখময় জীবনযাপন করে এবং আখিরাতে উত্তম প্রতিদান লাভ করে।
এমনকি দুনিয়াতেও মুমিনের ওপর যে বিপদাপদ আসে, তার যন্ত্রণাও ইয়াকীনের শীতলতায় এবং আল্লাহর তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টির মাধ্যমে দূর হয়ে যায়। তাকদীরে নির্ধারিত ভালো-মন্দ সবকিছুর প্রতি পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট থাকা এবং তার প্রশংসা করার মাধ্যমে সেই যন্ত্রণা লাঘব হয়।
একজন মুসলিমের সুখ ও প্রশান্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে করণীয় হলো, বেশি বেশি আল্লাহর যিকির এবং কুরআন কারীম তিলাওয়াত করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
{الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ}
অর্থ: {যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর যিকিরে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখো, আল্লাহর যিকিরেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।} [রাদ: ২৮]. ফলে একজন মুসলিম যত বেশি আল্লাহর যিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করবে, তত বেশি আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে, তার আত্মা পবিত্র ও তার ঈমান শক্তিশালী হবে।
অনুরূপভাবে প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো, বিশুদ্ধ উৎস থেকে দীনের বিষয়গুলো শেখার প্রতি যত্নবান হওয়া, যাতে সে সুস্পষ্ট জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে আল্লাহর ইবাদত করতে সক্ষম হয়। নবী (ﷺ) বলেছেন: (ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরয)।
একইভাবে কর্তব্য হলো, হিকমত বুঝে আসুক বা না আসুক আল্লাহ তাআলার সকল আদেশের সামনে সমর্পিত ও অনুগত হওয়া যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কিতাবে বলেন:
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا
অর্থ: {আর কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর জন্য উচিত নয় যে, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন, তখন তাদের সে বিষয়ে কোনো এখতিয়ার থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করবে, সে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত হলো।} [আহযাব: ৩৬].
আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সকল সাহাবীর ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।